শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী আমেজে রয়েছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে তৈরী হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। এরকম অবস্থায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতারা। উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে উৎকণ্ঠাও। বিশেষ করে বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে এই উৎকণ্ঠা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। সিলেট-২ ও সিলেট-৫ আসনে দলটির সাংসদ রয়েছে। এবারও তারা এই দুই আসন আওয়ামী লীগের কাছে দাবি করেছে। কাল এ দুই আসনে জাপার যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও জাপা চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু সিলেট-২ আসন ছেড়ে দিলেও সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ সাবেক সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদারকে প্রার্থী করেছে। তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। হাফিজ মজুমদার ও সেলিম উদ্দিনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কে মহাজোটের চূড়ান্ত প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে উভয়ের মধ্যেই কাজ করছে উৎকণ্ঠা।
এ বিষয়ে হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, ‘মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আমি। এরপরও বৃহত্তর স্বার্থে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা সবাইকে মেনে নিতে হবে। আমি প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় নামার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে নেতাকর্মীরা।’
এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত সিলেট-৫ ও সিলেট-৬ আসন দুটি দাবি করেছে। অন্যদিকে খেলাফত মজলিস চায় সিলেট-২ ও সিলেট-৩ আসন। কিন্তু শরিকদের এই দাবি অগ্রাহ্য করে বিএনপি সিলেটের ছয়টি আসনেই একাধিক নেতাকে প্রার্থী হিসেবে চিঠি দিয়েছে। এসব নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর ফলে শরিকরা আসন পায় কিনা এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। কাল সিলেট-৫ আসনে জামায়াতের সাবেক সাংসদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ও সিলেট-৬ আসনে মাওলানা হাবিবুর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
গেল মঙ্গলবার সিলেট-২ আসনে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী ও সিলেট-৩ আসনে জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন জমা দেন মনোনয়নপত্র। বিএনপি জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীরা সিলেট-১ আসন ছাড়া বাকি পাঁচটি আসনেই গত বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া আরেক শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব সিলেট-৬ আসনে দাখিল করেছেন মনোনয়নপত্র।
জোটের শরিকদের সামাল দিয়ে সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কয়টি আসনে বিএনপি প্রার্থী দিতে পারে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। কয়টি আসন জুটে, এ নিয়ে শরিক দলগুলোর নেতারাও উৎকণ্ঠিত।
সিলেট-৬ আসনে জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জোটের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপির যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, শেষ পর্যন্ত তারা তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।’
আসনটি থেকে জোটের প্রার্থী হিসেবে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই বলেও দাবি করেন তিনি। তবে অতীতের মতো জোটের শরিকদের মনোনয়ন দিয়ে এবার বিএনপি ভুল করবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির দলীয় প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বারবার আসনটি জোটের শরিকদের জন্য বিএনপির হাতছাড়া হয়েছে। এবার হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
সিলেট-৬ আসনের মতো একই অবস্থা সিলেট-৫ আসনে। এই আসনে জামায়াতকে কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী মামুনুর রশীদ। শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে ছেড়ে দিলেও এখানে ইতিবাচক ফলাফল না আসার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এদিকে প্রায় সকল আসনেই বিএনপি থেকে একাধিকজন মনোনয়নপত্র দাখিল করায় তাদের মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী হওয়া নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড শেষ পর্যন্ত কাকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়, এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে শঙ্কায় সিলেটে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া নেতারা।
প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে উৎকণ্ঠার বাইরে বিএনপি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়েও উৎকণ্ঠিত। সিলেট বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও থেমে নেই গণগ্রেফতার। প্রতিদিনই তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হয়রানি করছে বলে অভিযোগ বিএনপির। এ রকম অবস্থায় নির্বাচনি মাঠে টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কায় বিএনপি।